স্কুলব্যাগে ভূত

হরর গল্প

  • ১ মাস আগে
  • |
  • ৯৩ জন দেখেছেন

হঠাৎ ব্যাগ থেকে কিছু একটা পড়ে গেল। শুভ্র দেখল ছায়ার মতো কিছু একটা বেঞ্চে ওর পাশে বসে আছে।

টিফিনের সময় স্কুলের ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করতেই শুভ্রা হতবাক। টিফিন বক্স এত হালকা কেন? শুভ্রর বাবা প্রতিদিন শুভ্রর জন্য টিফিন বক্সের ব্যবস্থা করেন। আজ বাবা আমাকে একটা বাক্স ভর্তি খাবার দিলেন। খাবার গেল কোথায়!

ঝঙ্কল শুভ্র টিফিনবক্সটা কানের কাছে নিয়ে গেল। ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। ভেতরে খুব হালকা কিছু আছে মনে হচ্ছে। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে টিফিন বক্সের মুখ খুললাম! সে কে! বাক্সের ভেতরে শুধু আধা খাওয়া খেজুর! দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন দাঁত দিয়ে খেজুরের বাকি অংশগুলো কেটে ফেলেছে।

কি আশ্চর্য! শুভ্র জানে বাবা আজ টিফিনে নুডুলস, একটা সেদ্ধ ডিম আর তিনটে খেজুর দিয়েছে। খাবার গেল কোথায়! তারা কি ব্যাগের মধ্যে পড়েছিল?

এরই মধ্যে প্রায় সবাই টিফিন বক্স নিয়ে ক্লাস ত্যাগ করে। ক্লাসরুম সম্পূর্ণ ফাঁকা। শুভ্র ব্যাগে মাথা রেখে গভীর মনোযোগে খাবার খুঁজছে। নাহ! ব্যাগে খাবার নেই। যাইহোক, নিশ্চিত হওয়ার জন্য, শুভ্রা ব্যাগ থেকে নোটবুক, তোয়ালে, পেন্সিল বক্স, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং রেইনকোট এক এক করে নামিয়ে বেঞ্চে রাখল। তারপর ব্যাগটা উল্টো করে ঝাড়ু দিতে লাগলো।

হঠাৎ ব্যাগ থেকে কিছু একটা পড়ে গেল। শুভ্র দেখল ছায়ার মতো কিছু একটা বেঞ্চে ওর পাশে বসে আছে। দেখতে খুব মানবিক। তবে দৈর্ঘ্যে খুবই ছোট। শুভ্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

শুভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কে তুমি?' সে উত্তর দিল, 'কি অদ্ভুত ছেলে বাবা! তুমি আমাকে জানো না আমি ভূতের বাচ্চা। আমার নাম কিটকাট। শুনেছি আমাদের দেখলে মানুষ খুব ভয় পায়। কিন্তু আমি দেখছি তুমি আমাকে ভয় পাও না। মানুষ কেন আমাদের ভয় পায় বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমরা আগের মতো মানুষকে বিরক্ত করি না। আমরা আজকাল মানুষের রক্ত-মাংস খাই না। আমরা আপনার মত রান্না করা খাবার খেতে ভালোবাসি। ভূতগ্রামে আজকাল অনেক ফাস্টফুডের দোকান। আমরা ফাস্ট ফুড খুব পছন্দ করি।

মাথা নেড়ে বলল, 'দারুণ হয়েছে তোমার টিফিন।' কিন্তু তোমার কষ্টে তারিখগুলো শেষ করতে পারলাম না।

শুভ্র বলল, 'আমি শেষ করতে পারিনি মানে? কিছুই বাকি নেই। আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন আমি কি টিফিন খাই? তুমি এক টুকরো খেজুরও খেয়েছ।' কিটকাট বলল, 'খাওয়ার অর্ধেকটা বাকি ছিল।'

এই বলে কিটকোটের চোখ পড়ল টিফিন বক্সে রাখা খেজুরের আধা কেকের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক খাওয়া খেজুর কুঁচকে মুখ ভরে উঠল। তারপর আরামে চিবানো শুরু করলো। বললেন, 'কী মজা! আমি খেজুর খুব পছন্দ করি।' শুভ্র বলেন, 'আমিও খেজুর পছন্দ করি। কিন্তু তা বলে খেজুরের বীজও চিবিয়ে খাবে?' কিটকাট বলল, 'আহা! তুমি কেন রাগান্বিত? খেজুর আমার কাছে তোমার চিপসের চেয়েও সুস্বাদু।'


কিটক্যাটের কোন সাড়া নেই। কয়েকবার ডাকার পরও কোনো সাড়া না পাওয়ায় শুভ্র ভাবল কিটক্যাট হয়তো ফিরে গেছে।
টিফিনের সময় প্রায় শেষ। শুভ্রা কিটক্যাটকে স্কুলব্যাগে ফিরে আসতে বলল। কিটকোট বলল, 'টিফিন খাওয়া শেষ করেছি। এখন ব্যাগে শুধু বই আর নোটবুক।' শুভ্র বলল, 'ব্যাগে বসে একটু পড়ালেখা করলেই পারবে।'

কিটকোট উঠে বলল, 'পড়াশোনার ভয়ে এখানে পালিয়ে এসেছি। আমাকে এখানে পড়তে আসতে হবে? তিনে ওঠার পর আমার পড়া বেড়েছে! আর তুমি ক্লাস ফাইভে পড়ো। আমি আপনার বই দেখে ভয় পাই। আমি পারি না তুমি তোমার পড়া পড়তে। আমাকে এখন শান্তিতে ঘুমাতে দাও। তোমার স্কুল শেষ হলে আমাকে জাগাও। আমি তোমার সাথে তোমার বাড়িতে যাব।' শুভ্র বলল, তুমি আমার বাসায় যাবে? মানে? কেন?'

কিটক্যাট উত্তর দেওয়ার আগেই বেল বেজে উঠল। সবাই ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে দেখে শুভ্রা তাড়াতাড়ি স্কুলের ব্যাগ নিয়ে ঢুকল। এদিকে ক্ষুধার্ত পেট কুঁকড়ে যাচ্ছে। স্কুল শেষ হলে শুভ্র গলায় ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। শুভ্রা তার বন্ধুদের এড়াতে প্রতিদিনের রাস্তা ছেড়ে অন্য পথে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে কিটক্যাটের সাথে কথা বলতে হবে। কেন শুভ্রাকে নিয়ে ওর বাসায় যেতে চাইছে আমাদের জানতে হবে। স্কুল থেকে একটু দূরে একটা নিরিবিলি জায়গা পেয়ে শুভ্রা ব্যাগের চেইন খুলে দিল। তিনি বললেন, 'কিটকাট, বেরিয়ে এসো।'

কিটক্যাটের কোন সাড়া নেই। কয়েকবার ডাকার পরও কোনো সাড়া না পাওয়ায় শুভ্র ভাবল কিটক্যাট হয়তো ফিরে গেছে। কিন্তু ব্যাগে চেইন লাগাতে গেলেই হঠাৎ ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে কিটক্যাট। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 'এভাবে কেউ ব্যাগে চেইন রাখে নাকি! আরেকটু হলেই আমার ডান কান কেটে যেত! মধুর ঘুম থেকে উঠতে পারো না? ব্যাগে দেখলাম তোমার গানের বই আছে। গান গেয়ে সে আমাকে জাগিয়ে তুলতে পারে।'

ইতিমধ্যেই ক্ষুধার্ত অবস্থায়, তার উপর কিটক্যাটের এই অদ্ভুত দাবিগুলি শুনে শুভ্রা তার চুল ছিঁড়ে ফেলতে চাইল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'কিটকাট, তুমি আমার বাসায় যেতে চাও কেন?' উত্তরে কিটক্যাট বলেন, 'শুনেছি তোমার ঈদ আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আপনি কি অনেক ঈদ উপভোগ করেন? নতুন জামা পরে? সেমাই, কোরমা, পোলাও, মাংস রান্না করেন? এসব খাবার আমি কখনো খাইনি। আমার পক্ষে।

মন্তব্য করুন
Comment Profile
মন্তব্য
Loading...
দুঃখিত! এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য নেই:(

এই পোস্টে বর্তমানে কোন মন্তব্য নেই.