বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যােগাযােগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করেছে ইন্টারনেট। এটা কম্পিউটারে এমনই এক সংযােগ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থে সারা বিশ্বই চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এর মাধ্যমে যােগাযােগের ক্ষেত্রে নবদিগন্ত সূচিত হয়েছে। এর পাশাপাশি তথা প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য।
অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ‘ইন্টারনেট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হলাে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক তথা নেটওয়ার্কের রাজা। এর মাধ্যমে সারাবিশ্বের কম্পিউটারগুলাে একই সূত্রে গ্রথিত হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনাে স্থান থেকে যেকোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেকোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যােগাযােগ কিংবা সংবাদ আদানপ্রদান করতে পারে।
১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাত্র ৪টি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তুলেছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী অভ্যন্তরীণ এক যােগাযােগ ব্যবস্থা। এই যােগাযােগ ব্যবস্থার নাম ছিল ‘ডপার্নেট’। ক্রমশ চাহিদার ভিত্তিতে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এরকম অন্য একটি যােগাযােগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘নেস্ফোনেট’। ৩ বছরের মধ্যে নেস্ফোনেট-এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইতােমধ্যে গড়ে ওঠে আরও অনেক ছােট-মাঝারি নেটওয়ার্ক।
এতে এর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এ অরাজকতা থেকে মুক্তি পেতে পুরাে ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা দেখা দেয়। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ‘ইন্টারনেট’ নামক একটি ধারণার সাথে। বর্তমান বিশ্বে এর প্রায় ২০০ কোটি সদস্য। এ সংখ্যা প্রতি মাসে শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
ইন্টারনেট নামক যােগাযােগ ব্যবস্থাটি কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এর কোনাে মূল কেন্দ্রও নেই। এক Server থেকে আরেক Server-এর সংযােগের ফলেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে বিশাল Internet Networking সাম্রাজ্য। Server-এর মাধ্যমে এর কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান শহরে স্থাপিত হয়েছে একাধিক Server। যেকোনাে স্থান থেকে যেকোনাে একটি Server-এর সাথে যােগাযােগ স্থাপন করলেই বিশ্বের সকল Server-এর সাথে যােগাযােগ স্থাপিত হয়।
এটি তথ্যাদি টাইপ করতে সাহায্য করে ও এর নিজস্ব মেমােরিতে জমা রাখে। এরপর তা নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপকের কাছে তথ্যাদি পাঠানাের ব্যবস্থা করে।
এর পূর্ণ নাম modilator/Demodulator. এর দ্বারা সাধারণত তথ্যাদি টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে পাঠানাের উপযােগী করা হয়। এটি এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে তথ্যাদিকে ডিজিটাল থেকে এনালগ আবার এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার একটা ডিভাইস।
টেলিফোন বা সেলুলার লাইন ছাড়া ইন্টারনেটের কোনাে প্রক্রিয়াই সম্ভব নয়। লাইনের স্পিড-এর ওপর তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হওয়া নির্ভর করে। এনালগের তুলনায় ডিজিটাল টেলিফোনে তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হয়।
এদের কাজ অনেকটা পােস্ট অফিসের মতাে। এদের সদস্য হলে এরা মাসিক বা ব্যবহৃত সময়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটা চার্জ নিয়ে সদস্যদের কম্পিউটার, ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইটের (vSAT) মাধ্যমে দেশেবিদেশে অন্যান্য ইন্টারনেট সদস্যদের সাথে যােগাযােগ করিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন TAST চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services network)। এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট, Brae Bdmail Pradeshto Net, Agni System ইত্যাদি সংস্থাসহ মােট ১২টি সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার হিসেবে কাজ করছে।
১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় অফলাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। তখন ইন্টারনেট সার্ভিসগুলাের মধ্যে প্রদেষ্টা নেট, অগ্নি সিস্টেম, বিডিমেল, বিডিনেট, এবং অরােরা-১ ছিল উল্লেখযােগ্য। ই-মেইলের কেবল ডাউনলােড (মেইল গ্রহণ) ও আপলােড (মেইল প্রেরণ) ছাড়া আর কিছুই করা সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে গ্রহকরা তাদের কম্পিউটার থেকে যােগাযােগ সফটওয়্যারের মাধ্যমে মডেম ও টেলিফোন লাইনের সাহায্যে সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মেইল বিনিময় করতাে। সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলাে, দিনে কয়েকবার আই.এস.ডি টেলিসংযােগ তারের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিতাে।
একই সাথে গ্রাহকদের কাছে আসা মেইলগুলাে ডাউনলােড করে রাখতাে। উল্লিখিত ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনাে সুসম্পর্ক না থাকায় এক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক অন্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছে সরাসরি ‘ই-মেইল পাঠাতে পারতাে না। তাদের একজনের পাঠানাে তথ্য সারাবিশ্ব ঘুরে অন্য গ্রাহকের কাছে যেতাে। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশাল জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন VSAT চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services Network)। এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট, ইউ অনলাইন, Brac Bdmail, Pradeshta, Net, Agni System সহ মােট ১২টি সংস্থা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার হিসেবে কাজ করছে।
ইন্টারনেটের ব্যাপক সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা তথা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিথ্যা এবং অপ্রাসঙ্গিক তথ্য প্রচার, পর্ণছবি দেখা, জুয়াখেলা, ব্ল্যাক মেইলিং ইত্যাদি মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে যেকোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলেই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। এতে একসাথে হাজার হাজার কম্পিউটারে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয়। তবে তখন এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত এবং তা কেবল ই-মেইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট সংযোগের প্রসার ঘটতে থাকে। ২০০০ সালের শুরুতে ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল প্রায় ৬০,০০০। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়ক সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়। এতে দেশে ইন্টারনেটের গতি অনেক বেড়ে যায়। ২০১৭ সাল নাগাদ সাবমেরিন ক্যাবলের দ্বিতীয় মহাসড়কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।