আমার জীবনের লক্ষ্য

ভাব সম্প্রসারণ

  • ১০ মাস আগে
  • |
  • ১২৯ জন দেখেছেন

ভূমিকা

মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রয়োজন। লক্ষ্য বিহীন জীবন হল রাডার ছাড়া নৌকার মত। দিশাহীন জীবন কালের আবর্তে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই জীবনের শুরুতেই একটা লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে গেলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। কবির ভাষায়, 'দ্রুবতারা চায় অবিচল লক্ষ্য পৃথিবীর শেষে, লক্ষ্যহীন জীবন তারণী কুল না কভু।

লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা

ছোটবেলা থেকেই জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতাম। আমি তখন তরুণ। মনটা অস্থির হয়ে উঠল। আমি চারপাশে তাকালাম এবং যা দেখলাম তাতে হতবাক হয়ে গেলাম। আকাশে উড়োজাহাজ গর্জন করতে দেখে ভেবেছিলাম পাইলট হব। স্কুলের বইয়ে বিজ্ঞানী নিউটন, আলভা এডিসন বা গ্যালিলিওর গল্প পড়তাম আর ভাবতাম একদিন বিজ্ঞানী হবো। রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের কবিতা পড়ে ভেবেছিলাম একদিন তাদের মতো বিশ্বখ্যাত লেখক হব। একটু বড় হওয়ার পর যখন জ্ঞানটা একটু বাড়ল, তখন বুঝলাম শুধু ইচ্ছে করলে কিছুই হয় না। তাই অনেক ভেবেচিন্তে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম- বড় হয়ে ডাক্তার হব। এই লক্ষ্য নির্ধারণের অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানবসেবা।

ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা শেখার কারণ

আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সীমিত ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। দেশের বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ এখন ভালো চিকিৎসাসেবা পায় না। বড় বড় অনেক চিকিৎসকের মধ্যে এখন ব্যবসায়িক মানসিকতা ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থা বদলানো দরকার। এজন্য চাই নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক। তাই আমি ভালো ডাক্তার হতে চাই । আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমি আমার জীবনের চারদিকে যে করুণ চিত্র দেখছি , তাতে সব সময় একটা বেদনাকাতর অনুভূতি আমার মনে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে। সেই বেদনাঘন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিয়ত একটা প্রচেষ্টা আমি অনুভব করি । কেননা দারিদ্র্যতার কারণে তারা বঞ্ছিত হচ্ছে সুচিকিৎসা থেকে। এছাড়া প্রতিবছর দেশের হাজার হাজার কোমলপ্রাণ অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এসব অসহায় মানুষের জীবন , মৃত্যু নির্ভর করছে ডাক্তারদের ওপর। আর তাই এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা প্রদানের অন্যতম উপায় হিসেবে আমি এমন লক্ষ্য নির্বাচন করেছি।

লক্ষ্য অর্জনের উপায়

বর্তমানে আমি নবম শ্রেণির ছাত্র। আমার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ভালোভাবে পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করব। এইচ.এস.সি পাস করার পর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হব। মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর এম.বি.বি. এস পাস করে একজন দক্ষ ডাক্তার হয়ে এদেশের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াব। আমার কর্ম জীবনের সবগুলো দিন মানবসেবায় নিয়োজিত করব। কেননা মানুষ বাঁচে কর্মে , বয়সে নয়। মানবসেবার মতো মহৎ কর্মের মাধ্যমে তাই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

সার্থকতা

আমার একার পক্ষে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তবু আমার ইচ্ছা কোনো এক গাঁ - এর অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের যেন বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়। আজকের ডাক্তাররা যেখানে অর্থলোভী এবং শহরমুখী হয়ে পড়েছে সেখানে আমার গ্রামে যাওয়ার ফলে যদি গ্রামের দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের মনে আশার আলো ফুটে ওঠে তবেই আসবে আমার জীবনের সার্থকতা।

জীবনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা

আমি এখন আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি বরাবরই গণিত এবং বিজ্ঞানে আগ্রহী। স্কুলের নির্ধারিত পড়া ছাড়াও অবসর সময় পেলে বিজ্ঞানের বই পড়ি, গণিত করি। আমি প্রকৃতির রহস্যে বিস্মিত। আমি আবিষ্কারের গল্প পড়তে উপভোগ করি। তাই আমি নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নিলাম। মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলেজে গেলেও বিজ্ঞান পড়ব। জীববিদ্যা তখন আমার একটি বিষয় হবে। আশা করি, নিয়মিত পড়াশোনা করলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পাব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে আমি মেডিকেল কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারব। আমি ঔষধের যে কোন শাখায় বিশেষজ্ঞ হতে আশা করি।

জনসেবা ও কর্মজীবন 

একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে আমি কর্মজীবন শুরু করতে চাই। সরকারি চাকরি গ্রহণ না করে স্বাধীনভাবে রোগী দেখব। এজন্য আমি গ্রামের অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ের স্থানকে বেছে নেব। অধিক অর্থোপার্জনের জন্য শহরই উপযুক্ত স্থান , কিন্তু আমার অর্থের প্রতি কোনো লোড নেই। শহরের ভালো ডাক্তার গ্রামে থাকতে চায় না। ফলে জটিল রোগের জন্য গ্রামের মানুষদের শহরে আসতে হয়। অথচ গরিব গ্রামের লোকদের সেই আর্থিক সংগতি থাকে না। আর্থিক অসুবিধার কারণে কত লোক বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমি গ্রামের সেসব হতদরিদ্র জনগণের সেবা করতে চাই। তাদের জন্য বিনা ফিতে চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকবে। ধনীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফী আদায় করব। আমার ইচ্ছা , গ্রামের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একটি পদ্ধতিগত মডেল তৈরি করা। যাতে চিকিৎসাসেবা - বঞ্চিত গ্রামের মানুষেরা উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা পায়।

উপসংহার 

ডাক্তারি একটি মহৎ পেশা। উকিল , ইঞ্জিনিয়ার , অর্থনীতিবিদ , ম্যাজিস্ট্রেট - এসব বর্ণাঢ্য পেশার চাইতে ডাক্তারি পেশা সম্পূর্ণ আলাদা। ডাক্তারি পেশায় অর্থোপার্জন হয় আবার মানবসেবার প্রত্যক্ষ সুযোগও এ পেশাতে রয়েছে। তাই আমি ডাক্তার হতে চাই। এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য।

আরও দেখুন

শিষ্টাচার
শিষ্টাচার
প্রবন্ধ রচনাসমূহ
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
প্রবন্ধ রচনাসমূহ
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
প্রবন্ধ রচনাসমূহ
আমার জীবনের লক্ষ্য
আমার জীবনের লক্ষ্য
ভাব সম্প্রসারণ
শীতের সকাল
শীতের সকাল
প্রবন্ধ রচনাসমূহ