পরিবেশ দূষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে একটি টেলিভিশন ভাষণ প্রস্তুত করুন। পরিবেশ দূষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে টেলিভিশন আলোচনা
সুধিমন্ডলী, আসসালামু আলাইকুম। আজ আমরা পরিবেশ দূষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছি, যা আমাদের পরিবেশকে সুন্দর ও সুখী করতে বড় ভূমিকা রাখবে। আমরা সবাই জানি যে পরিবেশ এবং মানুষের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ যেমন একটু একটু করে তার পরিবেশ গড়ে তুলেছে, সভ্যতার চরম পর্যায়ে সেই মানুষ আবার তার পরিবেশকে নানাভাবে ধ্বংস করছে। ফলে মানবজাতি আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
পরিবেশ দূষণের জন্য শুধু একটি বা দুটি নয়, অসংখ্য কারণ রয়েছে। কিন্তু পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। অন্যদিকে বিশ্বে প্রতিমুহূর্তে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু প্রকৃতির প্রদত্ত সম্পদ বাড়ছে না। সে কারণে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ ব্যাপকভাবে পড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মেটাতে মানুষ নির্মমভাবে বনজ সম্পদ ধ্বংস করছে। এতে একদিকে যেমন উদ্ভিদের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণীজগত। এই দুই জগতের ক্ষতির কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। পরিবেশ দূষণের আরেকটি কারণ হল শক্তি উৎপাদন। এই শক্তি উৎপাদনের সময় মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্মদানে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ,
বায়ু প্রকৃতির একটি অসীম নিয়ন্ত্রক। সেই বায়ু আজ বিভিন্ন উপায়ে দূষিত এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জ্বালানী; যেমন তেল, কয়লা, গ্যাস পোড়ানোর ফলে প্রতিনিয়ত বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রাও বাড়ছে। এতে করে অসময়ে বর্ষণ, কুয়াশা, ঝড় ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তেল, কয়লা পুড়ে যে গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে মানুষের মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। বায়ুর মতো পানিও আজকাল নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য, তরল পেট্রোলিয়াম হ্যালোজেন, বিষাক্ত হাইড্রোকার্বন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা, শহরের ড্রেন ও নালা-নর্দমা দিয়ে বয়ে আসা দূষিত পানি প্রতিনিয়ত নদ-নদীতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে পানি দূষিত হচ্ছে।
কলকারখানার বিকট আওয়াজ, মোটরযানের হর্ন, বাজি, পটকার শব্দ, রেডিও-টেলিভিশনের শব্দ, মানুষের চেঁচামেচি, চিৎকার, উৎসব-আনন্দের নামে হৈ-হুল্লোড়, উচ্চ সুরে মাইক, রেকর্ড প্লেয়ার বাজানো- সব মিলিয়ে যেন শব্দের এক মহাযজ্ঞ চলছে। এসব শব্দের ফলে মানুষের জীবনে নানা রকম বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। যেমন— শ্রবণশক্তির বিলোপ, মানসিক বিপর্যয়, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি ও স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি অস্বাভাবিক শব্দেরই পরিণাম। যাকে শব্দদূষণ বলা হয় ৷
প্রিয় শ্রোতৃমণ্ডলী,
আপনারা নিশ্চয় জানেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধকল্পে জাতিসংঘের নির্দেশে প্রতি বছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস‘ পালিত হয়ে আসছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বিশ্ব পরিবেশ কীভাবে দূষিত হচ্ছে, তা বিশ্ববাসীর গোচরে আনাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা তাদের সাথে একাত্ম হতে পারছি না। উপলব্ধি করতে পারছি না আগামী প্রজন্মকে কোন পরিবেশে ঠেলে দিচ্ছি। তাই আমাদের প্রত্যেককে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগামী পৃথিবী যেন নির্মল ও সুন্দর হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। আর পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে— বৃক্ষ নিধন নয়, বরং বৃক্ষরোপণ করে এ পৃথিবীকে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে তা ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে কয়লা, গ্যাস ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে। কার্বন মনোক্সাইডের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুরোনো মোটরযানগুলোকে বাতিল করতে হবে। সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে বিভিন্ন দেশে বৃহৎ শক্তিগুলোর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ বন্ধ করতে হবে। এসবের চর্চা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আগামী প্রজন্মকে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারব। শেষ করার আগে কবির ভাষায় বলতে চাই—
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিজের পরিবেশ সুন্দর করতে অন্যকে সাহায্য করুন, আল্লাহ হাফেজ।